বাংলাদেশের সাধারণ চলচ্চিত্র ও ওয়েব-প্ল্যাটফর্মে যেমন ‘সুলভ বিনোদন’ ছিল, তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উঠে এসেছে গভীরতা ও ভেতরের ভাব গড়া কাজের প্রতি চাহিদা। নিঃসংশয়, অনম বিশ্বাস সেই প্রান্তরে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। চিত্রনাট্য, সুর ও গল্প—all in one—এই ত্রিমাত্রিক কর্মকাণ্ডে তিনি একাধারে কাজ করে চলেছেন।
চলুন তাঁর জীবন, কর্ম ও প্রভাব বিশ্লেষণ করি, যাতে বোঝা যায় কেন অনম বিশ্বাস আজকে শুধুই একজন ডেস্ক-স্ক্রিনরাইটার নন — বরং একটি সাংস্কৃতিক ছোঁয়া, নতুন সম্ভাবনার প্রতীক।
শৈশব ও শিক্ষাজীবন
অনম বিশ্বাসের জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯৮১ (বা ১৯৮?) তারিখে বাংলাদেশে (নেটটিভ বাংলা তালিকায় দেওয়া) হয়। তৎকালীন সময়ে বিজ্ঞাপন, সাংবাদিকতা ও সৃজনশীল মিডিয়া-কাজের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম পদক্ষেপ নেন।
জীবনের প্রথম দিকে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে গল্প ও দৃশ্যচিত্রের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে — ভাষা, সমাজ ও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ তার কর্মবাণীকেই নির্মাণ করে।
কর্মজীবন ও প্রধান সাফল্য
অনম বিশ্বাস মূলত চিত্রনাট্যকারী, পরিচালক ও সুরকার—এই তিন ক্ষেত্রেই সক্রিয়।
২০১৬ সালে চলচ্চিত্র Aynabaji জন্য তিনি বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য বিভাগে জয় লাভ করেন।
২০১৮ সালে Debi মুক্তি পান—এই ছবিটির পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার ছিলেন তিনি।
এছাড়া তিনি সুরকার হিসেবে ২০১০ সালে Dubshatar ছবির সাউন্ডট্র্যাক-এ কাজ করেছেন।
এই সাফল্যগুলো প্রমাণ করে, তিনি শুধু কাগজে লেখা চিত্রনাট্য নয়—স্থানীয় পাঠক ও দর্শক-ভিত্তিক ভাবেৎচিত্র, সুর ও কথা-বলে সিনেমা গঠন করতে পারছেন।
গঠনশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল বৈশিষ্ট্য
অনম বিশ্বাসের কাজের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ধরা পড়েছে:
লোক-যথার্থতা: সাধারণ মানুষের গল্প, স্থানীয় ভাষার মর্ম, সমাজের অদৃশ্য চিত্র—সব কিছু তার কাজের নখদর্পণে আসে।
বহুমাত্রিক সৃজনশীলতা: তিনি শুধু চিত্রনাট্য লেখক নন—সুরকার হিসাবেও কাজ করেন, গল্পকার হিসাবেও সক্রিয়। এ কারণে তার সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের ভিজ্যুয়াল, শব্দ ও ভাষা একসাথে কাজ করে।
গল্পের গভীরতা ও সামাজিক প্রসঙ্গ: “Aynabaji”-তে যেভাবে শেডযুক্ত চরিত্র ও সামাজিক বাস্তবতা মেশানো হয়েছিল, সেটি তাঁর চিন্তার প্রসারকে প্রকাশ করে।
বিশেষ উল্লেখযোগ্য কাজ
Aynabaji (২০১৬) — চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত।
Debi (২০১৮) — তার পরিচালনায়, প্রযোজনায় লিপিবদ্ধ বাংলা সিনেমার একটি মাইলফলক।
তাঁর অন্যান্য কাজ: ওয়েব সিরিজ, শর্ট ফিল্ম এবং বিজ্ঞাপনশিল্পে স্ক্রিপ্ট ও সঙ্গীতের সংযোগ।
প্রভাব ও উত্তরাধিকার
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও ওয়েব সংস্কৃতিতে অনম বিশ্বাসের অবদান অনেক-প্রতিক্রিয়াশীল। তার কাজ-দৃষ্টিতে দেখা যায় নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের প্রতি এক ধরনের সম্ভবনাময় মনোবল।
তিনি দেখিয়েছেন—চিত্রনাট্য এবং সুর একসাথে থাকলে, সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, নতুন ভাষা ও ভাবনা হতে পারে।
তিনি প্রমাণ করেছেন, স্থানীয় গল্প, সুর ও ভাষা নিয়ে আন্তর্জাতিক ওয়েব প্ল্যাটফর্মেও প্রতিযোগী হতে পারি।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের দৃষ্টিকোণ
যদিও তার কাজের প্রশংসা রয়েছে, তথাপিও নির্মাণ ও বণ্টন ক্ষেত্রে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সাধারণ সমস্যা—বাজেট সংকট, প্রযুক্তির অভাব, আন্তর্জাতিক প্রচারের সীমাবদ্ধতা—এসব তার কার্যক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক। অনম বিশ্বাস দায়িত্ব নিয়ে বলেন, ‘বাংলা সিনেমার ধারা বদলে গেছে, দর্শকের স্বাদ উন্নত হয়েছে’।
ভবিষ্যতে তিনি ও তার সমসাময়িকরা কাজ করবেন—বড় বাজেটের সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। এ-দিক থেকে তার পথ চলা আশাব্যঞ্জক।
এরূপে, অনম বিশ্বাস একজন উদীয়মান শিল্প-সত্তা, যিনি চিত্রনাট্য, সুর ও গল্পের এক অনন্য সংমিশ্রণে কাজ করছেন।
তিনি শুধু একজন স্ক্রিনরাইটার নন—তিনি একজন সংস্কার-মঞ্চনাকারও। বাংলা চলচ্চিত্র ও মাধ্যমের ভবিষ্যতের দিকে তাকালে, তার রচনায় নিহিত সম্ভাবনা স্পষ্ট।
এই কারণেই মিউজিক গুরুকুলে আমরা অনম বিশ্বাসকে উচ্চমানের ‘চিত্রনাট্য ও সুরচিন্তক’ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই—যিনি শিক্ষার্থীদের দেখাতে পারবেন কীভাবে গল্প ও সুর একসাথে কাজ করে, কীভাবে সংস্কৃতি-ভিত্তিক ভাবনায় সিনেমা গড়া যায়।
বাংলা বিনোদনের নতুন অধ্যায়ে অনম বিশ্বাসের চাই সোজাসুজি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা। তাঁর কাজ আমাদের সামনে নতুন শেখার পথ উন্মুক্ত করেছে।
