কোন একদিন লিরিক্স, কোন একদিন এদেশের আকাশে লিরিক্স এটি একটি গজল গান। গজল আরব থেকে এর উৎপত্তি হলেও ফার্সি ভাষায় এটি বিশেষ বিকাশ লাভ করে। পরবর্তীতে উর্দু ভাষায় এটি সমধিক জনপ্রিয়তা পায়। আরবি, ফার্সি, পশতু, উর্দু ছাড়াও হিন্দি, পাঞ্জাবী, মারাঠি, বাংলা এমনকি ইংরেজিতেও গজল লেখা হয়।
প্রাথমিক দিকে ইমাম গাযালী, মওলানা জালালুদ্দিন রুমী, হাফীজ সীরাজী, ফারুখউদ্দীন আত্তার, হাকীম শানাঈ প্রমুখ গজল লিখে বেশ নাম করেন। পরবর্তিতে আমির খসরু, মীর তাকী মীর, ইব্রাহীম জক, মীর্জা গালিব, দাগ দেলবী এবং আধুনিক কালে আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, ফিরাক গোরখপুরী গজ’ল লেখক হিসাবে নাম করেন।
কোন একদিন লিরিক্স | Kono ekdin lyrics | গজল

কোন একদিন এদেশের আকাশে লিরিক্স
কোন একদিন
এই দেশের আকাশে
কালেমার পতাকা দুলবে।
সেইদিন সবাই
খোদায়ী বিধান পেয়ে
দুঃখ-বেদনা ভুলবে।
কোন একদিন…….
সেদিন আর রবে না
হাহাকার,
অন্যায়, জুলুম, অবিচার।
থাকবেনা অনাচার,
দুর্ণীতি – কদাচার।
সকলেই শান্তিতে থাকবে;
সেইদিন সবাই
খোদায়ী বিধান পেয়ে
দুঃখ-বেদনা ভুলবে।
একাকিনী রমণী,
নির্জন পথে যাবে।
কোনজন কটু কথা কবে না।
কোনদিন পথে-ঘাটে,
সম্পদের মোহে,
খুন আর রাহাজানি রবে না।
সেই দিন আর
নয় বেশী দূরে;
আর কিছু পথ গেলেই
মিলবে…।
সেইদিন সবাই
খোদায়ী বিধান পেয়ে
দঃখ-বেদনা ভুলবে।
অশান্তির কোপানলে
মরিস না ধুকে ধুকে।
আয় তোরা দিকে দিকে
ছুটে আয়…।
যতদিন দূরে যাবে,
ততদিন পিছে রবে
শান্তি আসিতে এই দুনিয়ায়।
খোদার আইন ছাড়া
অন্য কিছুতে আর
মানুষের শান্তি না মিলবে।
সেইদিন সবাই
খোদায়ী বিধান পেয়ে
দুঃখ-বেদনা ভুলবে…..
কোন একদিন।।।

গজল:
গজল হালকা মেজাজের লঘু শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। আবার হালকা-গম্ভীর রসের মিশ্রণে সিক্ত আধ্যাত্মিক গান। গজ’ল প্রেমিক-প্রেমিকার গান হলেও এ গান এমন একটি শৈলী যাতে প্রেম ও ভক্তির অপূর্ব মিলন ঘটেছে। পার্থিব প্রেমের পাশাপাশি গজ’ল গানে আছে অপার্থিব প্রেম, যে প্রেমে স্রষ্টার প্রতি আত্মার আকূতি নিবেদিত। গজ’ল গানে স্রষ্টা আর তার প্রেরিত মহাপুরুষদের প্রতি ভক্তির সঙ্গে মোক্ষ লাভের ইচ্ছা এসে মেলবন্ধন ঘটিয়েছে পার্থিব প্রেমের সঙ্গে।
গজ’ল গান উর্দু ও ফার্সি ভাষায় রচিত এক ধরনের ক্ষুদ্রগীত। আমির খসরু এ গানের স্রষ্টা এবং প্রচারের ক্ষেত্রেও তার অবদান অপরিসীম। তিনি সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজিকে প্রতিরাতে একটি করে গজ’ল শোনাতেন।
গজ’ল গানে কথা বেশি, সুরের প্রাধান্য কম। মূলত হালকা ধরনের গান হলেও সব ধরনের রচনাই এ গানের বিষয়বস্তু হতে পারে। উচ্চভাবপূর্ণ ও গাম্ভীর্যপূর্ণ রচনাও কোন কোন গানে দেখা যায়। এ গানে অনেকগুলো চরণ, কলি বা তুক্ থাকে। প্রথম কলি ‘স্থায়ী’ এবং বাদবাকি কলিগুলো ‘অন্তরা’
গজ’ল ভালো গাইতে হলে ভালো ভাষা-জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। টপ্পা ও ঠুমরির মতো গজ’ল প্রধানত কাফি, পিলু, ঝিঝিট, খাম্বাজ, বারোয়া, ভৈরবী রাগে গাওয়া হয়। গজ’ল গানে একটি বিশেষ আবেদন আছে, তাই এ গান শ্রোতার মনকে রসে আপ্লুত করে তোলে। গজ’ল খুবই জনপ্রিয় গান।
সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর, মীর্জা গালিব, দাগ, জওক, আরজু প্রমুখ অনেক কবি অজস্র সুন্দর সুন্দর গজ’ল রচনা করে গেছেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর, সম্রাজ্ঞী নূরজাহান, নবাব ওয়াজেদ আলী শাহর মতো ইতিহাস-প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের রচিত অনেক গজ’ল গানের সন্ধান পাওয়া যায়। বাংলা ভাষায় বেশকিছু গজ’ল রচিত হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা গজল রচনায় পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন।
‘গজল’ শব্দটি আরবি থেকেই চয়িত। এ শব্দের আক্ষরিক অর্থ, প্রেমিকার সঙ্গে কথোপকথন। গজলের পরিভাষায় উল্লেখ হয়েছে, ‘তারুণ্যের পরিস্থিতি বর্ণনা করুন অথবা প্রেমাস্পদের সঙ্গে সংসর্গের উল্লেখ করুন এবং ভালোবাসার চর্চা করুন কিংবা রমণীর সঙ্গে বাক্যালাপ করুন। তাই পরিভাষায় বর্ণিত বিষয়কে অবলম্বন করে গজ’ল রচিত গানকে ‘প্রণয়-সঙ্গীত’ বলেও চিহ্নিত করা হয়।
গজ’ল আবার ‘কাব্য-সঙ্গীত’ নামেও পরিচিত। কারণ গজ’ল গানে শৃঙ্গার রস যেমন মিলন আর বিরহের কথা বলে তেমনি তাতে ভক্তির কথাও উচ্চারিত হয়। দু’ধরনের ভাবের অভিব্যক্তি শৃঙ্গার রসে পরিপূর্ণতা আনে। অন্যদিকে গজল গান রচনায় যে বাণী প্রয়োগ করা হয় তাতে সব ধরনের রসের সমাবেশ দেখা যায়। ফলে গজ’ল গান কাব্যের গুণে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তাই গজ’ল শৃঙ্গার রসাÍক গান হলেও এক ধরনের ‘কাব্য-সঙ্গীত’।

আরও দেখুনঃ