জেব-উন-নেসা জামাল | বাঙালি গীতিকার

জেব-উন-নেসা জামাল ছিলেন বাংলা ভাষার গীতিকার। তিনি ঢাকা বেতারের কণ্ঠশিল্পী, কথিকা পাঠক ও অনুষ্ঠান পরিচালক ছিলেন। তিনি বেতারের মহিলা মাহফিল, স্কুল ব্রডকাস্ট, বুনিয়াদি গণতন্ত্রের আসর ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। গীতিকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। প্রেমমূলক, দেশাত্মবোধক ও মরমি গান রচনায় পারদর্শিতার পরিচয় দেন।

জেব-উন-নেসা জামাল | বাঙালি গীতিকার

শৈশব ও শিক্ষাজীবন

জেব-উন-নেসা জামাল ২৭ ডিসেম্বর, ১৯২৬ তারিখে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বগুড়ায়। পিতা ছিলেন কসিরুদ্দিন তালুকদার। তিনি বগুড়া ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন।এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর জেবউননেসা কলকাতার নবনির্মিত লেডি ব্রাবোন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৩ সালে তিনি আই, এ পরীক্ষায় বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর (৭৮) পেয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগেন্দ্র স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে একই কলেজে থেকে তিনি বি, এ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।
১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এ (প্রথম পর্ব) পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এ (শেষ পর্ব) পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণী অর্জন করেন। তিনি “আধুনিক বাংলা কাব্যে দেশপ্রেম’ শীর্ষক গবেষণার জন্য ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমী বৃত্তি লাভ করেন।

জেব-উন-নেসা জামাল | বাঙালি গীতিকার

সংসার

বি,এ পরীক্ষায় ্উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৫৪ সালে  সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান সৈয়দ জামাল উদ্দিনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জেবউননেসার পৈতৃক নিবাস বগুড়ার ‘হোয়াইট হাউসে’।

জেব-উন-নেসা জামাল চার সন্তানের জননী ছিলেন। তার প্রথম সন্তান জীনাত রেহেনা, টিভি বেতারের নিয়মিত কন্ঠশিল্পী। দ্বিতীয় সন্তান সৈয়দ নিজামউদ্দিন অর্থনীতিতে এম, এ পাশ করেছেন। তৃতীয় সন্তান শামীম বারী সমাজ বিজ্ঞানে এম, এ পাশ করেছেন। তিনিও বেতার ও টিভির একজন নিয়মিত শিল্পী ছিলেন।

কর্মজীবন

১৯৬৫ এর দিকে তিনি একজন কন্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ বেতারে আত্মপ্রকাশ করেন- এ প্রসঙ্গে জনাব আব্দুল হাই ‘বেতার বাংলা’ পত্রিকায় তাঁর শোকবার্তায় বলেছেন।

“ষাটের দশকের মাঝামাঝি তিনি মহিলা মাহফিল, স্কুল ব্রডকাষ্ট বুনিয়াদী গনতন্ত্রের আসর, ঘরোয়া, অঙ্গনা, ঘরনী, সুখী সংসার, কলকাকলী ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। ১৯৬৬ সালে তিনি রেডিওতে গীতিকার হিসেবে তিনি তালিকাভুক্ত হন।”
জেবউননেসা জামাল বাংলাদেশ টেলিভিশনের গীতিকার হিসেবে সংশ্লিষ্ট হন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সৃষ্টিলগ্ন থেকে। ষাটের দশকের প্রথম সারির গীতিকারদের মধ্যে জেবউননেসা জামাল ছিলেন অন্যতম।

জেব-উন-নেসা জামাল | বাঙালি গীতিকার

১৯৩৮-১৯৩৯ সালের দিকে জেবউননেসা যখন স্কুলের ছাত্রী তখন কলকাতার ‘জলছবি’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটি ছিল এরকম – “আজিকে মেঘের একী ঘনঘটা/ লুকালো কোথায় রবি আলোচ্ছটা?/ ক্ষণে ক্ষণে ডাকে মেঘ গুরু গুরু/ মোর প্রাণ কাঁপে দুরু দুরু/ বিজলী মেয়ে ঘোমটাটি খুলি/ হাসিছে আলোর চোখ দুটি তুলি/ সে হাসির ঝলকে ঝলকে/ অগ্নি ছুটিছে পলকে পলকে/ হেরিয়া ধরার এ রুদ্র ছবি/ ভীত চমকিত আমি ছোট কবি।

জেব-উন-নেসা জামালের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা খুব বেশি নয়-গীত গ্রন্থ ৫টি, গল্প গ্রন্থ ১টি, অনুবাদ গ্রন্থ ১টি, তাঁর প্রকাশিত গীত গ্রন্থের প্রথম গ্রন্থটির নাম “আমার যতো গান’। এ গ্রন্থটি তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বামীকে উৎসর্গ করেছেন। গ্রন্থটিতে ৬৪টি গান রয়েছে। গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল আগষ্ট ১৯৭৯, ভাদ্র ১৩৮৬ এ। বাকি চারটি গীতগ্রন্থর নাম ছিল-আরজি, গান এল মোর মনে, জাদুর পেনসিল ও সাগরের তীর থেকে।

মৃত্যু

জেব-উন-নেসা জামাল ১ এপ্রিল ১৯৯৫ তারিখে ঢাকার ধানমণ্ডিতে মৃত্যুবরণ করেন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment