দিলীপকুমার রায় । বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতালোচক, গীতরচয়িতা, সুরকার ও গায়ক

দিলীপকুমার রায়  বিখ্যাত বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতালোচক, গীতরচয়িতা, সুরকার ও গায়ক। সাহিত্যের নানান শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যও বিখ্যাত। তার পিতা ছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার ও গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

দিলীপকুমার রায় । বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতালোচক, গীতরচয়িতা, সুরকার ও গায়ক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

১৮৯৬ সালের ২২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তাঁর জন্ম। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী দিলীপকুমারের পিতা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (ডি.এল রায়) এবং পিতামহ দেওয়ান কার্তিকেয় চন্দ্ররায়। বাল্যকালে মাতৃহারা হয়ে দিলীপকুমার পিতার স্নেহচ্ছায়ায় বড় হতে থাকেন, কিন্তু মাত্র ১৬ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে ধনাঢ্য মাতামহের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে অনার্সসহ বি.এ (১৯১৮) পাস করে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান এবং সেখানে গণিতে ট্রাইপসের প্রথম ভাগ পাস করেন।

সঙ্গীতশিক্ষা

পরিণত সঙ্গীতশিক্ষা লাভ করেন সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী ও অচ্ছন বাঈ-এর কাছে। পাশ্চাত্য সঙ্গীতেও তার বিশেষ অধিকার ছিলো।

দিলীপকুমার রায় । বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতালোচক, গীতরচয়িতা, সুরকার ও গায়ক

সঙ্গীত জীবন

দিলীপ রায় ছিলেন রবীন্দ্রোত্তর যুগের একজন প্রধান সুর-রচয়িতা ও গায়ক। গান রচনা, গানে সুর দেওয়া এবং গান গাওয়া এ তিন ক্ষেত্রেই তিনি সমান দক্ষ ছিলেন। ১৯২২ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত সঙ্গীতে পারদর্শিতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি সমগ্র ভারতের সঙ্গীতজগৎ পরিক্রমা করেন।

ভারতীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত সম্পর্কে বক্তৃতা দানের জন্য তিনি ১৯২৭ সালে ইউরোপ সফর করেন। সঙ্গীতের তত্ত্ব নিয়ে তিনি সমকালীন পৃথিবীর দুই প্রধান সঙ্গীতবিদ রবীন্দ্রনাথ ও রম্যাঁ রলাঁর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সুভাষচন্দ্র বসু এবং জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে তাঁর প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল; তিনি মহাত্মা গান্ধী, বার্ট্রান্ড রাসেল প্রমুখ মনীষীরও সান্নিধ্য লাভ করেন।

দিলীপকুমার স্বকণ্ঠে গেয়ে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, কাজী নজরুল ইসলাম, হিমাংশুকুমার দত্ত প্রমুখের গান জনপ্রিয় করে তোলেন। নজরুলের সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তিনি নজরুলের গজল শ্রেণির গানের প্রচার ও জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করলে শান্তিনিকেতনের অনুমোদন না পাওয়ায় তিনি রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া ছেড়ে দেন। তাঁর গানের রেকর্ড সংখ্যা শতাধিক।

Google News
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

সম্মান

সঙ্গীতে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য দিলীপকুমার ‘সঙ্গীত রত্নাকর’ উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি ভারতের সঙ্গীত নাটক আকাদেমির সদস্য পদ (১৯৬৫) এবং কলকাতা ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সাহিত্য একাডেমিরও ফেলো ছিলেন।

সন্ন্যাসজীবন

১৯২৮ সালে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন এবং সারা জীবন সন্ন্যাসী থেকে সঙ্গীত ও সাহিত্য-সাধনায় নিয়োজিত থাকেন।

মৃত্যু

১৯৮০ সালের ৬ই জানুয়ারি তার দেহাবসান ঘটে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment