দেখা হলো বছর চারেক পর কবিতা লিরিক্স | Dekha holo bochor charek por kobita lyrics | কবিতা | সুব্রত মিত্র

দেখা হলো বছর চারেক পর কবিতা লিরিক্স | সুব্রত মিত্র একটি বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । বিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই তিনি সহপাঠীদের সাথে কাছাকাছি সিনেমা হলে ব্রিটিশ এবং হলিউডের চলচ্চিত্র দেখতেন । কলেজে পড়ার সময়ে তিনি ঠিক করেন তিনি একজন আর্কিটেক্ট বা একজন চিত্রগ্রাহক হবেন । তিনি ক্যামেরা সহকারীর কোন কাজ না পেয়ে বিজ্ঞানে ডিগ্রীর জন্য পড়াশোনা করতে থাকেন ।

দেখা হলো বছর চারেক পর কবিতা লিরিক্স | Dekha holo bochor charek por kobita lyrics | কবিতা | সুব্রত মিত্র

 

দেখা হলো বছর চারেক পর কবিতা লিরিক্স | Dekha holo bochor charek por kobita lyrics | কবিতা | সুব্রত মিত্র

 

দেখা হলো বছর চারেক পর কবিতা লিরিক্সঃ

দেখা হল বছর চারেক পর।
ভিড়ের মাঝে দেখতে পেলাম তোকে
দাঁড়িয়ে গেছিস বিপদ পাড়াতেই।
কী ভেবেছিস? দেখতে পাইনি তোকে?
পরনে তোর নীল জামা,
চোখে গোল ফ্রেমের মোটা চশমা,
শুনেছি তুই সুখেই আছিস,
ফুটফুটে দুটো মেয়েও এসেছে কোলজুড়ে।
চাকরীও করছিস বেশ।
আচ্ছা। তোরটা বরটা কেমন?
অনেক বেশি ভালোবাসে তোকে?
আমার চেয়েও বেশি?
তুই কী এখনো হুটহাট মন খারাপ করিস?
রেগে যাস, এরপর কাঁদতে থাকিস?
আচ্ছা, ও তোর রাগ ভাঙায়?
চোখের পানি মুছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি”
আচ্ছা, ও তোর গন্ধটা চেনে?
দূর থেকেই বুঝতে পারে তোর উপস্থিতি?
ও তোকে আদর করতে চাইলে, লজ্জা পাস?
এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বলিস, “যাহ!কেউ দেখে ফেলবে”
তুই যখন চুলটা খুলে দিস-
সেও কী ছুতো খোঁজে মিষ্টি গন্ধটা নেওয়ার?
যখন তখন এটা ওটার বাহানায় ছুঁয়ে দেয় তোর নরম হাত?
আচ্ছা, তুই কী তখনও ওই স্পর্শে কেঁপে উঠিস?
এখনো কী অমন অভিমানীই আছিস?
আজো অভিমান করে না খেয়ে থাকিস?
এখনো কী বৃষ্টি ভালোবাসিস?
বৃষ্টি নামলে জানালার পাশে গিয়ে বসিস?
এখনো অমন ভয় পাস, জোরে বিদ্যুৎ চমকালে?
ভয়ে নিশ্চয়ই নতুন বরের বুকে মাথা গুজিস?
রাতে এখন ঘুমুতে পারিস?
এখন বোধহয় আর ওষুধ লাগেনা।
মাথায় হাত বুলিয়ে, আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দেয় সে।
এখনো কী অনেক কথা বলিস?
অল্পতেই অসুখ বাঁধাস?
পূর্ণিমা রাতে চাঁদ দেখিস? আর গান শুনে কেঁদে বুক ভাসাস?
আমার যে কত প্রশ্ন, কত জিজ্ঞাসা তোর কাছে।
দেখা হলো বছর চারেক পর কবিতা লিরিক্স | Dekha holo bochor charek por kobita lyrics | কবিতা | সুব্রত মিত্র
ওটা নিশ্চয়ই তোর বর?
আর পাশে তোর মেয়ে দুটি?
তোকে দেখে সুখীই মনে হলো।
আচ্ছা, আগের মত অনেক হাসতে পারিস তো এখনো?
পারিস হয়তো…
নিশ্চয়ই নতুন বর তোকে হাসায়, মান ভাঙায়, প্রথম বর্ষায় কদম ফুল এনে দেয়।
আমার মত বোধহয় আর কেউ জ্বালায় না?
আমার মত রগচটা না।
আর কেউ কথায় কথায় ছেড়ে যেতে বলে না।
আচ্ছা, এখনো কী মিষ্টি খেতে পছন্দ করিস?
কাগজের ঠোঙায় দশটাকার দুটো লাড্ডু নিয়ে আসে কেউ?
বৃষ্টি হলে চানাচুর মাখা খেতে মন চায়?
কিংবা হঠাৎ হঠাৎ ফুচকা খেতে ইচ্ছা করে?
তোকে বোধহয় যেতে হবে এখন।
কত দায়িত্ব তোর এখন!
আমি কিন্তু আছি ঠিক সেই আগের মত!
চাকরী নেই, পকেটে টাকা নেই,
তাই দায়িত্বটাও নেই।
দেখা হলো বছর চারেক পর,
তুই এখন আর আমার নস,
অন্য কারো রাণী।
আর আমি?
রাজ্য হারানো, রাণী হারানো এক ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত যোদ্ধা।

সুব্রত মিত্র:

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে বিখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক জঁ রনোয়ার দ্য রিভার ছবি তুলতে কলকাতায় আসেন । সুব্রত মিত্র এই ছবিতে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন । কিন্তু তিনি তার বাবার সাহয্যে শুটিং দেখবার অনুমতি লাভ করেন । সেই সময়ে তিনি শুটিং-এর বিশদ বিবরণ এবং ছবি আঁকেন যার মধ্যে আলো, ক্যামেরা এবং অভিনেতাদের নড়াচড়া সমস্ত কিছুর বর্ণনা ছিল । একদিন চিত্রগ্রাহক ক্লদ রনোয়ার শুটিং-এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য তার বিবরণ দেখতে চান । এইভাবে তিনি এই চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক ক্লদ রনোয়ারের সান্নিধ্যে আসেন। এছাড়াও তিনি এই ছবিতে কাজ করার সময়ে সত্যজিৎ রায়ের সাথে পরিচিত হন। যিনি এই ছবিতে পরিচালক জঁ রনোয়ারের সাহায্যকারী হিসাবে ছিলেন।

 

Google News
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক হিসাবে মাত্র বাইশ বছর বয়েসে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা হয় । চলচ্চিত্রের ক্যামেরার ব্যবহার সম্পর্কে এর আগে তার কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল না। দ্য রিভার ছবিতে পর্যবেক্ষক হিসাবে তার অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি পথের পাঁচালীর চিত্রগ্রাহকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । পথের পাঁচালী থেকে শুরু করে নায়ক সত্যজিৎ রায়ের এই দশটি ছবি ছাড়াও তিনি অন্য পরিচালকের বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন ।

বাংলা চলচ্চিত্রকে পরিণত এবং আন্তর্জাতিক করে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃৎ তিনি ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের জাতীয় পুরস্কার এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে সারাজীবনের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে কোডাক পুরস্কার লাভ করেন । শেষজীবনে তিনি সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের সিনেমাটোগ্রাফির অধ্যাপক ছিলেন ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment