হাজার ব্যাথা বেদনার পরে গজল লিরিক্স | গজল গানের কলিগুলোর অর্থ প্রায়ই দ্ব্যর্থবোধক। প্রেম যখন পুরুষ বা নারীর প্রতি নিবেদিত হয় তখন সে গজল মানব-প্রেম বা পার্থিব-প্রেম, আবার প্রেম যখন স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয় তখন তা আধ্যাত্মিক প্রেম। তাই গজল গান এক ধরনের ‘ভাব-সঙ্গীত’ বলেও পরিচিত।
গজলের আরেকটি রূপও আছে। সে রূপটি অন্য কোন গানে নেই। আবৃত্তি আকারে গজল পরিবেশন। এসব ধর্মই গজল গান শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভুবনে আলাদা জাত হিসেবে গণ্য।
হাজার ব্যাথা বেদনার পরে গজল লিরিক্স | Hajaro Betha Bedonar Pore Lyrics | Islamic Cover Song | নওশাদ মাহফুজ
শিল্পী- নওশাদ মাহফুজ
কথা ও সুর: নিয়াজ মাখদুম
হাজার ব্যাথা বেদনার পরে গজল লিরিক্স :
হাজারও ব্যাথা বেদনার পরে
ফিরে আসনি তুমি আপন ঘরে
দ্বীনের আলো তুমি ছড়িয়ে দিতে
চলে গেলে মদীনায় মক্কা ছেড়ে
হে রাসূল….
তোমাকে ভুলি আমি কেমন করে ২
খেয়ে না খেয়ে দ্বীন প্রচারের কাজে
নিজেকে দিয়েছো বিলিয়ে
তায়েফের কাফেরেরা চিনলো না এ আলো
দুষ্টু ছেলেদের পিছু দিল লেলিয়ে ২
পাথরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে
সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরে
হে রাসূল….
তোমাকে ভুলি আমি কেমন করে ২
হেরার গুহায় তোমারই ধ্যান
আসমান থেকে নামে আল-কোরআন ২
ভাঙ্গল সবার ভুল তোমারই পরে
আসলো কোরআনের ছায়াতলে
খালিদ উমর আলী আবু বকর
ইসলামী ঝান্ডা নিল যে তুলে ২
আল-আমিন তুমি ছিলে যে সদা
সকল মানুষের তরে
হে রাসূল….
তোমাকে ভুলি আমি কেমন করে ২
হাজারও ব্যাথা বেদনার পরে
ফিরে আসনি তুমি আপন ঘরে
দ্বীনের আলো তুমি ছড়িয়ে দিতে
চলে গেলে মদীনায় মক্কা ছেড়ে
হে রাসূল….
তোমাকে ভুলি আমি কেমন করে .৩.
গজল এর শেরঃ
গজল গান দুটো পঙ্ক্তি নিয়ে রচিত। প্রতিটি খণ্ডকে ‘শের’ বলা হয়। অনেকগুলো ‘শের’ নিয়ে গজলের অবয়ব। শের কখনও একই বক্তব্য নিয়ে রচিত। আবার এতে কখনও বিভিন্ন বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা দেখা যায়। মূল কথা, গজলের কাব্য ভাবই মুখ্য। ভাষার লালিত্য, শব্দের ঝঙ্কায়, ছন্দের মাধুর্য গজলের বৈশিষ্ট্য। গজলের প্রথম শেরকে স্থায়ী এবং অন্যসব শেরকে ‘অন্তরা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। গজল গানে মূলত কাব্যিক ভাব প্রকাশিত।
রাগঃ
রাগের ক্ষেত্রে গজল যে কোন রাগেই গীত হতে পারে। এর জন্য নির্দিষ্ট কোন রাগ নেই। তবে যেসব রাগেই গজল পরিবেশিত হয় সেসব রাগে শৃঙ্গার রস সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। তাই কাফি, পিলু, খাম্বাজ, ভৈরবি প্রভৃতি চটুল রাগের ব্যবহার গজলে বেশি দেখা যায়। তাই বলে দরবারি কানাড়া, মিয়া-কি-মল্লার, বিলাসখানি টোড়ি, চন্দ্রকোষ প্রভৃতি গম্ভীর চালের রাগেও গজল পরিবেশনে কোন বাধা নেই। তবে দ্রুপদ বা খেয়ালের মতো তাল, বাঁট করা হয় না এবং স্থায়ী ছাড়া সবগুলো অন্তরা একই সুরে গাওয়া হয়।
তালঃ
তালের ক্ষেত্রে গজল পরিবেশনের পরিধি কিছুটা সীমিত। কাব্যনির্ভর গান বলে গজলে কোন কঠিন তাল ব্যবহার হয় না। তাতে গজলের কাব্যিকভাবে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। তাই স্বল্পমাত্রা আর সরল ছন্দের কাহারবা ও দাদরা তালেই বেশিরভাগ গজল গীত হয়। তালের ক্ষেত্রেও কোন ধরনের কূটলয়কারী বা তেহাই প্রয়োগ করা হয় না এবং গজল প্রধানত মধ্য লয়ে পরিবেশিত হয়।
বিভাগঃ
গজল গান মোটামুটি দুই পক্ষে বিভক্ত: ১. সাহিত্য পক্ষ, ২. সঙ্গীত পক্ষ। সাহিত্য পক্ষে কাব্য মূল ভূমিকা পালন করে। কাব্য আবার দুভাগে বিভক্ত: ১. তগজ্জুল, ২. তসব্বুফ। তগজ্জুল পর্বে মানব জাতির লৌকিক প্রেমের প্রাধান্য থাকে। এবং তসব্বুফ পর্বে থাকে অলৌকিক প্রেমের প্রাধান্য। সে সঙ্গে এ পর্বের আদিতে রহস্যবাদ ও অন্তে অদ্বৈতবাদের সমন্বয় প্রধান গুণ হিসেবে গণ্য। যার ফলে ঈশ্বরের কাছ থেকে ভক্তের পরম প্রাপ্তি ও চরম শান্তি লাভ হয়ে থাকে। গজল গানের সঙ্গীত পক্ষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এ অংশও দুই ভাগে বিভক্ত: ১. রাগ পর্ব, ২. তাল পর্ব। রাগ পর্বে শৃঙ্গার রসের সহায়ক রাগগুলো গজল গানে ব্যবহৃত হয়। গজল গানে রাগের শুদ্ধতা বজায় থাকে না। কারণ গজলে কাব্য ভাব মুখ্য, রাগ ভাব গৌণ। তাল পর্বে সাধারণত গজল লঘু তালে নিবদ্ধ থাকে। গজল তালে নিবদ্ধ থাকলেও কোন কোন গজল গানকে আদ্যোন্তে অনিবদ্ধভাবে গাইতেও শোনা যায়। গজল মূলত একক কণ্ঠে গীত গান। একজন শিল্পীই গজল গান পরিবেশন করে থাকেন।
গজল গান রচনার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর। তার রচিত গজলের বাণী যেন হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে এসেছে এবং শোনা মাত্রই হৃদয় মথিত হয়ে ওঠে। তিনি লিখেছেন :
নহি কো কারো সুখের খনি
অকেজো শুধু সবার জানি
এক মুঠো ধূলি মাত্র হাতের।

গঠনঃ
গজল গানের কলিগুলোর অর্থ প্রায়ই দ্ব্যর্থবোধক। প্রেম যখন পুরুষ বা নারীর প্রতি নিবেদিত হয় তখন সে গজল মানব-প্রেম বা পার্থিব-প্রেম, আবার প্রেম যখন স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয় তখন তা আধ্যাত্মিক প্রেম। তাই গজল গান এক ধরনের ‘ভাব-সঙ্গীত’ বলেও পরিচিত।
গজলের আরেকটি রূপও আছে। সে রূপটি অন্য কোন গানে নেই। আবৃত্তি আকারে গজল পরিবেশন। এসব ধর্মই গজল গান শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভুবনে আলাদা জাত হিসেবে গণ্য।
বাংলাদেশে অনেক শিল্পিগোষ্টি বর্তমান শ্রুতি মধুর গজল পরিবেশনা করে থাকে । আমি দেখিনি তোমায় চোখের তারায় বর্তমান গজল গুলোর মাঝে অন্যতম ।
গজল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক ব্যতিক্রমধর্মী গান। এ গানের ‘ভাষার কাব্য ভাব, রাগের স্বর বিন্যাস ও তালের ছন্দ মাধুর্য এক অনির্বাচনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে থাকে।’
আরও দেখুন: