আজাদ রহমান ছিলেন একজন বাংলাদেশী সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী। পাশাপাশি তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও খেয়াল গানের চর্চা করেতেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
প্রাথমিক জীবন
আজাদ রহমান ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের রবীন্দ্র ভারতী কলেজ থেকে খেয়ালে অনার্স সম্পন্ন করেন। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি ফোক গান, কীর্তন, ধ্রুপদী সঙ্গীত, খেয়াল, টপ্পা গান, তুমড়ি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, অতুল প্রসাদের গান, দিজেন্দ্র গীতি, রজনী কান্তের গান চর্চা করেন। একই সময়ে তিনি একজন ক্রীস্টান পুরোহিতের কাছ থেকে পিয়ানো বাজানো শেখেন।
আজাদ রহমান পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন।
সঙ্গীত জীবন
আজাদ রহমানের চলচ্চিত্রে আগমন ১৯৬৩ সালে কলকাতার মিস প্রিয়ংবদা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে। সেই চলচ্চিত্রে তার সুরে কণ্ঠ দেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখার্জি ও প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়।তবে এই ছবিতে তাঁর সাথে যৌথ সংগীত পরিচালক হিসেবে ছিলেন সুবীর সেন। ছবির গান লিখেছিলেন শংকর ভট্টাচার্য। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার সুরকৃত প্রথম চলচ্চিত্র বাবুল চৌধুরীর আগন্তুক। তার সুরকৃত ও তার নিজেরই কণ্ঠে গাওয়া এপার ওপার চলচ্চিত্রের “ভালবাসার মুল্য কত”, ডুমুরের ফুল চলচ্চিত্রের “কারো মনে ভক্তি মায়ে”, দস্যু বনহুর চলচ্চিত্রের “ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়” গানগুলো সত্তরের দশকে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’-এর মত উল্লেখযোগ্য দেশাত্মবোধক গানের সুর করেছিলেন।

এরপর একেএকে ‘রাতের পর দিন’, ‘মাসুদ রানা’, ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘এপার ওপার’, ‘মাস্তান’, ‘আগুন’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘মায়ার বাঁধন’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘মতিমহল’, ‘কুয়াশা’, ‘ডুমুরের ফুল’ ‘দি ফাদার’, ‘নতুন বউ’, ‘আমার সংসার’, ‘মায়ার সংসার’, ‘পাগলা রাজা’, ‘চাঁদাবাজ’ ও ‘দেশ প্রেমিক’ ছবিতে তিনি সংগীত পরিচালনা করেন।
কাজী হায়াৎ-এর ছবি ‘দেশ প্রেমিক’ ছিল তাঁর সর্বশেষ ছবি। যেখানে তিনি সংগীত পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবির জন্য ‘তুমি কি দেখেছো কভু’ গানটিকেও নতুন করে সুরারোপ করেন। এই ছবিতে বেশ কিছু রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার করা হয়। যেখানে কণ্ঠ দেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
মৃত্যু
আজাদ রহমান ২০২০ সালের ১৬ মে হৃদরোগে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
