ছন্নছাড়া লিরিক্স | chonno chara lyrics : অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (ইংরেজি: Achintya Kumar Sengupta, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ১৯০৩ – ২৯শে জানুয়ারি, ১৯৭৬) বিশিষ্ট বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরে সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কল্লোল যুগের লেখকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।

ছন্নছাড়া লিরিক্স | chonno chara lyrics | অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত | kobita
ছন্নছাড়া – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত :
গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে।
গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া।
আঁকাবাঁকা শুকনো কতগুলো কাঠের কঙ্কাল
শূন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া—
রুক্ষ, রুষ্ট, রিক্ত, জীর্ণ।
লতা নেই, পাতা নেই, ছায়া নেই, ছাল-বাকল নেই;
নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি,
এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা।
ঐ পথ দিয়ে জরুরী দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।
ড্রাইভার বল্লে, ‘ওদিকে যাব না।
দেখছেন না ছন্নছাড়া ক’টা বেকার ছোকরা
রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
চোঙা প্যান্ট, চোখা জুত, রোখা মেজাজ, ঢোকা কপাল।
ওখান দিয়ে গেলেই গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে।
বলবে হাওয়া খাওয়ান।’
কারা ওরা?
চেনেন না ওদের?
ওরা বিরাট এক নৈরাজ্যের
এক নেই রাজ্যের বাসিন্দে। ওদের কিছু নেই।
ধীত নেই, ভীত নেই, রীতি নেই, নীতি নেই,
আইন নেই, কানুন নেই, বিনয় নেই, ভদ্রতা নেই,
শ্লীলতা শালীনতা নেই।
ঘেঁষবেন না ওদের কাছে।
কেন নেই?
ওরা যে নেই রাজ্যের বাসিন্দে।
ওদের জন্য কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই,
কারখানায় কাজ নেই, ট্রামে-বাসে জায়গা নেই,
মেলায়-খেলায় টিকেট নেই, হাসপাতালে বেড নেই,
বাড়িতে ঘর নেই, খেলবার মাঠ নেই,
অনুসরণ করার নেতা নেই, প্রেরণা জাগানো প্রেম নেই।
ওদের জন্য সম্ভাষণে কারোর দরদ নেই।
ঘরে-বাইরে উদাহরণ যা আছে
তা ক্ষুধাহরণের সুধা ক্ষরণের উদাহরণ নয়
তা সুধাহরণের ক্ষুধাভরণের উদাহরণ।
শুধু নিজের দিকে ঝোল টানা।
এক ছিল মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে ফালতু একটু রক,
তাও দিয়েছে লোপাট করে।
তাই এখন এসে পথে দাঁড়িয়েছে, সড়কের মাঝখানে।
কোত্থেকে আসছে— সেই অতীতের স্মৃতি নেই,
কোথায় দাঁড়িয়ে আছে— সেই বর্তমানের গতি নেই,
কোথায় চলেছে— নেই সেই ভবিষ্যতের ঠিকানা।
সেচহীন ক্ষেত, মনিহীন চোখ, চোখহীন মুখ,
একটা স্ফুলিঙ্গহীন ভিজে বারুদের স্তুপ।

আমি বললুম, ‘না আমি ওখান দিয়েই যাব।
ওখান দিয়েই আমার শটকাট।’
ওদের কাছাকাছি হতেই মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলুম,
‘তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে? লিফট চাই?’
‘আরে এইতো ট্যাক্সি— এইতো ট্যাক্সি-লে হালুয়া।’
স-উল্লাসে চেঁচিয়ে সিটি দিয়ে উঠলো,
‘পেয়ে গেছি, পেয়ে গেছি— চল পানসি বেল ঘড়িয়া।’
তিন তিনটি ছোকরা উঠে পড়লো গাড়িতে।
বললুম, ‘কদ্দুর যাবে?’
এই কাছেই, ঐ দেখতে পাচ্ছেন না ভিড়।
সিনেমা!
না।
জলসা!
না। নয় কোন ফিল্মি তারকার অভ্যর্থনা।
একটা নিরীহ লোক গাড়ি চাপা পড়েছে।
চাপা দিয়ে গাড়িটা উধাও।
আমাদের দলের কয়েকজন গাড়িটার পিছে ধাওয়া করেছে।
আমরা খালি ট্যাক্সি খুঁজছি।
কে সেই লোক? কে চাপা পড়েছে?
একটা বেওয়ারিশ ভিখিরি।
রক্তে মাংসে দলা পাকিয়ে গেছে।
ওর কেউ নেই, কিছু নেই।
শোবার জন্য ফুটপাত আছে তো
মাথার উপর ছাদ নেই,
ভিক্ষার জন্য পাত্র একটা আছে তো
তার মধ্যে প্রকাণ্ড একটা ফুটো।
রক্তে মাখামাখি সেই দলা পাকানো ভিখিরিকে
ওরা পাঁজা করে কোলে করে ট্যাক্সির মধ্যে তুলে নিল।
চেঁচিয়ে উঠলো শমশরে, আনন্দে ঝংকৃত হয়ে,
‘প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে।’
রক্তের দাগ থেকে আমার ভব্যতা ও শালিনতাকে বাঁচাতে গিয়ে
আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি।
তারপর সহসা শহরের সমস্ত কর্কশে—
কঠিনে, সিমেন্টে, কংক্রিটে, ইটে কাঠে পীঠে পাথরে
দেয়ালে-দেয়ালে বেজে উঠলো এক দুর্বার উচ্চারণ।
এক প্রত্যয়ের তপ্ত শঙ্খ-ধ্বনি।
‘প্রাণ আছে, প্রাণ আছে।’
প্রাণ থাকলে স্থান আছে, মান আছে,
সমস্ত বাঁধা নিষেধের বাইরেও আছে
অস্তিত্বের অধিকার।
ফিরে আসতেই দেখি
গলির মোড়ে সেই শুকনো গাছের বৈরাগ্য বিদীর্ণ করে
বেরিয়ে পড়েছে হাজার হাজার সোনালি কচি পাতা,
মর্মরিত হচ্ছে বাতাসে।
দেখতে-দেখতে গুচ্ছে-গুচ্ছে উতলে উঠেছে ফুল
ঢেলে দিয়েছে বুকের সুগন্ধ।
উড়ে এসেছে রঙ-বেরঙের পাখি
শুরু করেছে কলকণ্ঠে কাকলি।
ধীরে ধীরে ঘন পত্রপুঞ্জে ফেলেছে দীর্ঘ ছায়া
যেন কোন শ্যামল আত্মীয়তা।
অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখলুম
কঠোরের প্রচ্ছন্নে মাধুর্যের বিস্তীর্ণ আয়োজন।
প্রাণ আছে, প্রাণ আছে।
শুধু প্রাণই এক আশ্চর্য সম্পদ।
এক ক্ষয়হীন আশা।
এক মৃত্যুহীন মর্যাদা।

কর্মজীবন
অচিন্ত্যকুমার ১৯২৫ সালে কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। তিনি বিচিত্রায়ও কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ক্রমে সাব-জজ, জেলা জজ ও ল’ কমিশনের স্পেশাল অফিসার পদে উন্নীত হয়ে ১৯৬০ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যকর্ম
১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় নীহারিকা দেবী ছদ্মনামে অচিন্ত্যকুমারের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তিনি উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখান। তিনি উপন্যাসের আঙ্গিকে আবেগপূর্ণ ভাষায় ধর্মগুরুদের জীবনীও (যেমন- পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ, চার খণ্ডে (১৯৫২-১৯৫৭)) লিখেছেন। তার প্রথম উপন্যাস বেদে (১৯২৮); এটি আঙ্গিক, রচনাভঙ্গি ও বিষয়বিন্যাসে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট উপন্যাস। তার লেখায় আধুনিকতা অতি প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে। ” বেদে” উপন্যাসের জন্য তিনি রবীন্দ্রনাথের অভিনন্দনপত্র পান।
কাকজ্যোৎস্না ” প্রথম কদমফুল তার অন্য দুইটি বিখ্যাত উপন্যাস। ছোটগল্পশিল্পী হিসেবেও তিনি খ্যাত। বিচারবিভাগে চাকরির বদৌলতে তিনি বাংলাদেশের নানা স্থানে ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সংস্পর্শে আসেন; এইসব অন্তরঙ্গ পরিচিতজনদের জীবনের নানা কাহিনী অচিন্ত্যকুমার তার ছোটো গল্পগুলিতে নিপুণভাবে এঁকেছেন। টুটাফাটা (১৯২৮) তার প্রথম ছোটো গল্পের বই। তার স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ কল্লোল যুগ (১৯৫০) পাঠক-মহলে বেশ সাড়া জাগায়।
অচিন্ত্যকুমারের গ্রন্থসংখ্যা সত্তরের মত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলির একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল।
আরও দেখুনঃ
- বুকে ধরে যত ফুল ফোটালাম লিরিক্স | Buke dhore jto ful fotalam lyrics | Khalid Hasan Milu
- তুমি বিস্মৃত লগ্ন মাধুরী লিরিক্স | Tumi mishrito logno madhuri lyrics | James | জেমস
- বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ লিরিক্স | banglar hindu banglar buddha lyrics | গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
- চাঁদ কেন আসে না আমার ঘরে লিরিক্স | Chand Keno Ashe Na Amar Ghore Lyrics | Raghab Chatterjee
- মা গান জেমস লিরিক্স | Maa Gan James Lyrics | James